অনেক আকাশ

কেন তুমি আস যাও ? – হে অস্থির , হবে নাকি ধীর !
কোনোদিন !- রৌদ্রের মতন তুমি সাগরের’ পরে
একবার-দুইবার জ্বলে উঠে হতেছ অস্থির ! –
তারপর, চ’লে যাও কোন দূরে পশ্চিমে- উত্তরে,-
সেখানে মেঘের মুখে চুমু খাও ঘুমের ভুতরে,
ইন্দ্রধনুকের মতো তুমি সেইখানে উঠিতেছ জ্ব’লে,
চাঁদের আলোর মতো একবার রাত্রির সাগরে
খেলা করো ;- জ্যোৎস্না চ’লে যায়,- তবু তুমি যাও চ’লে
তার আগে; – যা বলেছ একবার, যাবে নাকি আবার তা ব’লে !

যা পেয়েছি একবার পাব নাকি আবার তা খুঁজে !
যেই রাত্রি যেই দিন একবার কয়ে গেল কথা
আমি চোখ বুজিবার আগে তারা গেল চোখ বুজে,
ক্ষীণ হয়ে নিভে গেল সলিতার আলোর স্পষ্টতা !
ব্যথার বুকের ‘পরে আর এক ব্যথা বিহ্বলতা
নেমে এলো ;- উল্লাস ফুরায়ে গেল নতুন উৎসবে ;
আলো অন্ধকার দিয়ে বুনিতেছি শুধু এই ব্যথা, –
দুলিতেছি এই ব্যথা – উল্লাসের সিন্ধুর বিপ্লবে !
সব শেষ হবে , – তবু আলোড়ন ,- তা কি শেষ হবে !

সকল যেতেছে চ’লে ,- সব যায় নিভে – মুছে- ভেসে-
যে সুর থেমেছে তার স্মৃতি তবু বুকে জেগে রয় !
যে নদী হারায়ে যায় অন্ধকারে –রাতে – নিরুদ্দেশে,
তাহার চঞ্চল জল স্তব্ধ হয়ে কাঁপায় হৃদয় !
যে মুখ মিলায়ে যায় আবার ফিরিতে তারে হয়
গোপনে চোখের’পরে,- ব্যথিতের স্বপ্ন্বের মতন !
ঘুমন্তের এই অশ্রু –কোন পীড়া –সে কোন বিস্ময়
জানায়ে দিতেছে এসে !- রাত্রি-দিন আমাদের মন
বর্তমান অতীতের গুহা ধ’রে একা একা ফিরিছে এমন !

আমরা মেঘের মতো হঠাৎ চাঁদের বুকে এসে
অনেক গভীর রাতে- একবার পৃথিবীর পানে
চেয়ে দেখি, আবার মেঘের মতো চুপে চুপে ভেসে
চ’লে যাই এক ক্ষীণ বাতাসের দুর্বল আহ্বানে
কোন দিকে পথ বেয়ে! – আমাদের কেউ কি তা জানে ।
ফ্যাকাশে মেঘের মতো চাঁদের আকাশ পিছে রেখে
চ’লে যাই;- কোন এক রুগ্ন হাত আমাদের টানে ?
পাখির মায়ের মতো আমাদের নিতেছে সে ডেকে
আরো আকাশের দিকে,- অন্ধকারে,- অন্য কারো আকাশের থেকে !

একদিন বুজিবে কি চারিদিকে রাত্রির গহবর !-
নিবন্ত বাতির বুকে চুপে চুপে যেমন আঁধার
চ’লে আসে ,- ভালোবেসে – নুয়ে তার চোখের উপর
চুমু খায়,- তারপর তারে কোলে টেনে লয় তার;-
মাথার সকল স্বপ্ন – হৃদয়ের সকল সঞ্চার
একদিন সেই শূন্য সেই শীত নদীর উপরে
ফুরাবে কি? – দুলে দুলে অন্ধকারে তবুও আবার
আমার রক্তের ক্ষুধা নদীর ঢেউয়ের মতো স্বরে
গান গাবে,- আকাশ উঠিবে কেঁপে আবার সে সঙ্গীতের ঝড়ে !

পৃথিবীর – আকাশের পুরানো কে আত্মার মতন
জেগে আছি; – বাতাসের সাথে সাথে আমি চলি ভেসে,
পাহাড়ে হাওয়ার মতো ফিরিতেছে একা একা মন,
সিন্ধুর ঢেউয়ের মতো দুপুরের সমুদ্রের শেষে
চলিতেছে ; – কোন এক দূর দেশে – কোন নিরুদ্দেশে
জন্ম তার হয়েছিল ,- সেইখানে উঠেছে সে বেড়ে;
দেহের ছায়ার মতো আমার মনের সাথে মেশে
কোন স্বপ্ন !- এ আকাশ ছেড়ে দিয়ে কোন আকাশেরে
খুঁজে ফিরি !- গুহার হাওয়ার মতো বন্দী হয়ে মন তব ফেরে !

গাছের শাখার জালে এলোমেলো আঁধারের মতো
হৃদয় খুঁজিছে পথ, ভেসে ভেসে ,- সে যে কারে চায় ।
হিমের হওয়ার হাত তার হাড় করিছে আহত,-
সে- ও কি শাখার মতো – পাতার মতন ঝ’রে যায় !
বনের বুকের গান তার মতো শব্দ ক’রে গায় !
হৃদয়ের সুর তার সে যে কবে ফেলেছে হারায়ে !
অন্তরের আকাঙ্ক্ষারে – স্বপনেরে বিদায় জানায়
জীবন মৃত্যুর মাঝে চোখ বুজে একাকী দাঁড়ায়ে ;
ঢেউয়ের ফেনার মতো ক্লান্ত হয়ে মিশিবে কি সে – ঢেউয়ের গায়ে !

হয়তো সে মিশে গেছে- তারে খুঁজে পাবে নাকো কেউ!
কেন যে সে এসেছিল পৃথিবীর কেহ কি তা জানে !
শীতের নদীর বুকে অস্থির হয়েছে যেই ঢেউ
শুনেছে সে উষ্ণ গান সমুদ্রের জলের আহ্বানে !
বিদ্যুতের মতো অল্প আয়ু তবু ছিল তার প্রাণে ,
যে ঝড় ফুরায়ে যায় তাহার মতন বেগ লয়ে
যে প্রেম হয়েছে ক্ষুব্ধ সেই ব্যর্থ প্রেমিকের গানে
মিলায়েছে গান তার ,- তারপরে চ’লে গেছে বয়ে।
সন্ধ্যার মেঘের রঙ কখন গিয়েছে তার অন্ধকার হয়ে !

তবুও নক্ষত্র এক জেগে আছে,- সে যে তারে ডাকে!
পৃথিবী চায় নি যারে,- মানুষ করেছে যারে ভয়
অনেক গভীর রাতে তারায় তারায় মুখ ঢাকে
তবুও সে ! – কোন এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ চোখে ছবি দেখে একা জেগে রয় !
মানুষীর মতো ? কিংবা আকাশের তারাটির মতো ,-
সেই দূর- প্রণয়িনী আমাদের পৃথিবীর নয় !
তার দৃষ্টি তাড়নায় করেছে যে আমারে ব্যাহত ,-
ঘুমন্ত বাঘের বুকে বিষের বাণের মতো বিষম সে ক্ষত !

আলো আর অন্ধকারে তার ব্যথা- বিহবলতা লেগে,
তাহার রক্তে পৃথিবী হতেছে শুধু লাল !-
মেঘের চিলের মতো – দুরন্ত চিতার মতো বেগে
ছুটে যাই ;- পিছে ছুটে আসিতেছে বৈকাল-সকাল
পৃথিবীর ;- যেন কোন মায়াবীর নষ্ট ইন্দ্রজাল
কাঁদিতেছে ছিঁড়ে গিয়ে ! কেঁপে কেঁপে পড়িতেছে ঝ’রে!
আরো কাছে আসিয়াছি তবু আজ, – আরো কাছে কাল
আসিব তবুও আমি,- দিন রাত্রি রয় পিছে প’ড়ে ,-
তারপর একদিন কুয়াশার মতো সব বাধা যাবে স’রে !

সিন্ধুর ঢেউয়ের তলে অন্ধকার রাতের মতন
হৃদয় উঠিতে আছে কোলাহলে কেঁপে বার-বার!
কোথায় রয়েছে আলো জেনেছে তা – বুঝেছে তা মন
চারিদিকে ঘিরে তারে রহিয়াছে যদিও আঁধার !
একদিন এই গুহা ব্যথা পেয়ে আহত হিয়ার
বাঁধন খুলিয়া দেবে ! অধীর ঢেউয়ের মতো ছুটে
সেদিন সে খুঁজে লবে ওই দূর নক্ষত্রের পার !
সমুদ্রের অন্ধকারে গহ্বরের ঘুম থেকে উঠে
দেখিবে জীবন তার খুলে গেছে পাখির ডিমের মতো ফুটে !

0 Shares