জীবন

যতদিন রয়ে যাই এই শক্তি রয়ে যায় সাথে ,-
বিকালের দিকে যেই ঝড় আসে তাহার মতন !
যে-ফসল নষ্ট হবে তারি ক্ষেত উড়াতে ফুরাতে
আমাদের বুকে এসে এই শক্তি করে আয়োজন !
নতুন বীজের গন্ধে ভ’রে দেয় আমাদের মন
এই শক্তি ,- একদিন হয়তো বা ফলিবে ফসল !-
এরি জোরে একদিন হয়তো বা হৃদয়ের বন
আহ্লাদে ফেলিবে ভ’রে অলক্ষিত আকাশের তল !
দুরন্ত চিন্তার মতো গতি তার ,- বিদ্যুতের মত সে চঞ্চল !

১০

অঙ্গারের মতো তেজ কাজ করে অন্তরের তলে,-
যখন আকাঙ্ক্ষা এক বাতাসের মতো বয়ে আসে,
এই শক্তি আগুনের মতো তার জিভ তুলে জ্বলে !
ভস্মের মতন তাই হয়ে যায় হৃদয় ফ্যাকাশে !
জীবন ধোঁয়ার মতো ,- জীবন ছায়ার মতো ভাসে ;
যে অঙ্গার জ্ব’লে জ্ব’লে নিভে যাবে ,- হয়ে যাবে ছাই,-
সাপের মতন বিষ লয়ে সেই আগুনের ফাঁসে
জীবন পুড়িয়া যায় ;- আমরাও ঝ’রে পুড়ে যাই !
আকাশে নক্ষত্র হয়ে জ্বলিবার মতো শক্তি –তবু শক্তি চাই !

১১

জান তুমি ?- শিখেছ কি আমাদের ব্যর্থতার কথা ?-
হে ক্ষমতা , বুকে তুমি কাজ করো তোমার মতন !-
তুমি আছ,- রবে তুমি,- এর বেশি কোনো নিশ্চয়তা
তুমি এসে দিয়েছ কি ? – ওগো মন, মানুষের মন,-
হে ক্ষমতা ,- বিদ্যুতের মতো তুমি সুন্দর- ভীষণ !
মেঘের ঘোড়ার’পড়ে আকাশের শিকারীর মতো ;-
সিন্ধুর সাপের মতো লক্ষ ঢেউয়ে তোলো আলোড়ন !
চমৎকৃত করো,- শরীরেরে তুমি করেছ আহত !
যতই জেগেছ,- দেহ আমাদের ছিঁড়ে যেতে চেয়েছে যে তত !

১২

তবু তুমি শীত- রাতে আড়ষ্ট সাপের মতো শুয়ে
হৃদয়ের অন্ধকারে প’ড়ে থাকো ,- কুণ্ডলী পাকায়ে !-
অপেক্ষায় ব’সে থাকি,- স্ফুলিঙ্গের মতো যাবে ছুঁয়ে
কে তোমারে !- ব্যাধের পায়ের পাড়া দিয়ে যাবে গায়ে
কে তোমারে !- কোন অশ্রু , কোন পীড়া হতাশার ঘায়ে
কখন জাগিয়া ওঠো ;- স্থির হয়ে ব’সে আছি তাই ।
শীত- রাত বাড়ে আরো ,- নক্ষত্রেরা যেতেছে হারায়ে ,-
ছাইয়ে যে-আগুন ছিল সেই সবও হয়ে যায় ছাই !
তবুও আরেকবার সব ভস্মে অন্তরের আগুন ধরাই !

১৩

অশান্ত হাওয়ার বুকে তবু আমি বনের মতন
জীবনেরে ছেড়ে দিছি !- পাতা আর পল্লবের মতো
জীবন উঠেছে বেজে শব্দে – স্বরে;- যতবার মন
ছিঁড়ে গেছে ,- হয়েছে দেহের মতো হৃদয় আহত
যতবার ;- উড়ে গেছে শাখা , পাতা পড়ে গেছে যত ;-
পৃথিবীর বন হয়ে- ঝড়ের গতির মতো হয়ে ,
বিদ্যুতের মতো হয়ে আকাশের মেঘে ইতস্তত ;-
একবার মৃত্যু লয়ে – একবার জীবনেরে লয়ে
ঘূর্ণির মতন বয়ে যে বাতাস ছেঁড়ে ,- তার মতো গেছি বয়ে !

১৪

কোথায় রয়েছে আলো- আঁধারের বীণার আস্বাদ !
ছিন্ন রুগ্ন ঘুমন্তের চোখে এক সুস্থ স্বপ্ন হয়ে
জীবন দিয়েছে দেখা ;- আকাশের মতন অবাধ
পরিচ্ছন্ন পৃথিবীতে , সিন্ধুর হাওয়ার মতো বয়ে
জীবন দিয়েছে দেখা ;- জেগে উঠে সেই ইচ্ছা লয়ে
আড়ষ্ট তারার মতো চমকায়ে গেছি শীতে- মেঘে !
ঘুমায়ে যা দেখি নাই , জেগে উঠে তার ব্যথা স’য়ে
নির্জন হতেছে ঢেউ হৃদয়ের রক্তের আবেগে !
-যে আলো নিভিয়া গেছে তাহার ধোঁয়ার মতো প্রাণ আছে জেগে !

১৫

নক্ষত্র জেনেছে কবে ওই অর্থ শৃঙ্খলার ভাষা !
বীণার তারের মতো উঠিতেছে বাজিয়া আকাশে
তাদের গতির ছন্দ,- অবিরত শক্তির পিপাসা
তাহাদের,- তবু সব তৃপ্ত হয়ে পূর্ণ হয়ে আসে !
আমাদের কাজ চলে ইশারায় ,- আভাসে- আভাসে !
আরম্ভ হয় না কিছু,- সমস্তের তবু শেষ হয় ,-
কীট যে ব্যর্থতা জানে পৃথিবীর ধুলো মাটি ঘাসে
তারো বড়ো ব্যর্থতার সাথে রোজ হয় পরিচয় !
যা হয়েছে শেষ ,- শেষ হয় কোনোদিন যা হবার নয় !-

১৬

সমস্ত পৃথিবী ভ’রে হেমন্তের সন্ধ্যার বাতাস
দোলা দিয়ে গেল কবে ! –বাসি পাতা ভূতের মতন
উড়ে আসে ! – কাশের রোগীর মতো পৃথিবীর শ্বাস ,-
যক্ষ্মার রোগীর মতো ধুঁকে মরে মানুষের মন !-
জীবনের চেয়ে সুস্থ মানুষের নিভৃত মরণ !
মরণ ,- সে ভালো এই অন্ধকার সমুদ্রের পাশে !
বাঁচিয়া থাকিতে যারা হিঁচড়ায় – করে প্রাণপণ ,-
এই নক্ষত্রের তলে একবার তারা যদি আসে ,-
রাত্রিরে দেখিয়া যায় একবার সমুদ্রের পারের আকাশে !-

0 Shares