জীবন

১৭

মৃত্যুরেও তবে তারা হয়তো ফেলিবে বেসে ভালো !
সব সাধ জেনেছে যে সেও চায় এই নিশ্চয়তা !
সকল মাটির গন্ধ আর সব নক্ষত্রের আলো
যে পেয়েছে ,- সকল মানুষ আর দেবতার কথা
যে জেনেছে,- আর এক ক্ষুধা তবু- এক বিহ্বলতা
তাহারো জানিতে হয় ! এইমতো অন্ধকারে এসে !-
জেগে জেগে যা জেনেছ ,- জেনেছ তা- জেগে জেনেছ তা ,-
নতুন জানিবে কিছু হয়তো বা ঘুমের চোখে সে !
সব ভালোবাসা যার বোঝা হল ,- দেখুক সে মৃত্যু ভালোবেসে !

১৮

কিংবা এই জীবনেরে একবার ভালোবেসে দেখি !
পৃথিবীর পথে নয় ,- এইখানে- এইখানে ব’সে ;-
মানুষ চেয়েছে কিবা ? পেয়েছে কি ?- কিছু পেয়েছে কি !-
হয়তো পায়নি কিছু – যা পেয়েছে , তা-ও গেছে খ’সে
অবহেলা ক’রে ক’রে , কিংবা তার নক্ষত্রের দোষে ;-
ধ্যানের সময় আসে তারপর,- স্বপ্নের সময় !-
শরীর ছিঁড়িয়া গেছে ,- হৃদয় পড়িয়া গেছে ধ্বসে !-
অন্ধকার কথা কয় ,- আকাশের তারা কথা কয়
তারপর,- সব গতি থেমে যায়,- মুছে যায় শক্তির বিস্ময় !

১৯

কেউ আর ডাকিবে না ,- এইখানে এই নিশ্চয়তা !-
তোমার দু’চোখ কেউ দেখে থাকে যদি পৃথিবীতে ,
কেউ যদি শুনে থাকে কবে তুমি কি কয়েছ কথা ,
তোমার সহিত কেউ থেকে থাকে যদি সেই শীতে ,-
সেই পৃথিবীর শীতে ,- আসিবে কি তোমারে চিনিতে
এইখানে সে আবার !- উঠানে পাতার ভিড়ে ব’সে ,
কিংবা ঘরে – হয়তো দেয়ালে আলো জ্বেলে দিতে দিতে ,-
যখন হঠাৎ নিভে যাবে তার হাতের আলো সে ,-
অসুস্থ পাতার মতো দুলে তার মন থেকে প’ড়ে যাবে খ’সে !

২০

কিংবা কেউ কোনোদিন দেখে নাই ,- চেনেনি আমারে !
সকালবেলার আলো ছিল যার সন্ধ্যার মতন ,-
চকিত ভূতের মতো নদী আর পাহাড়ের ধারে
ইশারায় ভূত ডেকে জীবনের সব আয়োজন
আরম্ভ সে করেছিল ! –কোনোদিন কোনো লোকজন
তার কাছে আসে নাই ;- আকাঙ্ক্ষার কবরের’পরে
পুবের হাওয়ার মতো এসেছে সে হঠাৎ কখন !-
বীজ বুনে গেছে চাষা ,- সে বাতাস বীজ নষ্ট করে !
ঘুমের চোখের’পরে নেমে আসে অশ্রু আর অনিদ্রার স্বরে !

২১

যেমন বৃষ্টির পরে ছেঁড়া ছেঁড়া কালো মেঘ এসে
আবার আকাশ ঢাকে ,- মাঠে মাঠে অধীর বাতাস
ফোঁপায় শিশুর মতো,- একবার চাঁদ ওঠে ভেসে ,-
দূরে- কাছে দেখা যায় পৃথিবীর ধান ক্ষেত ঘাস ,
আবার সন্ধ্যার রঙে ভ’রে ওঠে সকল আকাশ ,-
মড়ার চোখের রঙে সকল পৃথিবী থাকে ভ’রে !-
যে মরে যেতেছে তার হৃদয়ের সব শেষ শ্বাস
সকল আকাশ আর পৃথিবী থেকে পড়ে ঝ’রে ।
জীবনে চলেছি আমি সে পৃথিবীর আকাশের পথ ধরে ধরে !

২২

রাত্রির ফুলের মতো – ঘুমন্তের হৃদয়ের মতো
অন্তর ঘুমায়ে গেছে ,- ঘুমায়েছে মৃত্যুর মতন !-
সারাদিন বুকে ক্ষুধা লয়ে চিতা হয়েছে আহত ,-
তারপর,- অন্ধকার গুহাএই- ছায়াভরা বন
পেয়েছে সে ! – অশান্ত হাওয়ার মতো মানুষের মন
বুজে গেছে- রাত্রি আর নক্ষত্রের মাঝখানে এসে !-
মৃত্যুর শান্তির স্বাদ এইখানে দিতেছে জীবন ,-
জীবনের এইখানে একবার দেখি ভালোবেসে !
শুনে দেখি,- কোন কথা কয় রাত্রি, কোন কথা নক্ষত্র বলে সে !

২৩

পৃথিবীর অন্ধকার অধীর বাতাসে গেছে ভ’রে-
শস্য ফ’লে গেছে মাঠে ,- কেটে নিয়ে চলে গেছে চাষা ;
নদীর পারের বন মানুষের মতো শব্দ ক’রে
নির্জন ঢেউয়ের কানে মানুষের মনের পিপাসা ,-
মৃত্যুর মতন তার জীবনের বেদনার ভাষা ,-
আবার জানায়ে যায় !- কবরের ভূতের মতন
পৃথিবীর বুকে রোজ লেগে থাকে যে আশা হতাশা ,-
বাতাসে ভাসিতেছিল ঢেউ তুলে সেই আলোড়ন !-
মড়ার কবর ছেড়ে পৃথিবীর দিকে তাই ছুটে গেল মন !

২৪

হলুদ পাতার মতো ,- আলেয়ার বাষ্পের মতন ,
ক্ষীণ বিদ্যুতের মতো ছেঁড়া-মেঘ আকাশের ধারে ,
আলোর মাছির মতো- রুগ্নের স্বপ্নের মতো মন
একবার ছিল ঐ পৃথিবীর সমুদ্রে পাহাড়ে ,-
ঢেউ ভেঙে ঝ’রে যায় ,- ম’রে যায় ,- কে ফেরাতে পারে !
তবুও ইশারা করে ফাল্গুন- রাতের গন্ধে বয়ে
মৃত্যুরেও তার সেই কবরের গহ্বরে আঁধারে
জীবন ডাকিতে আসে ;- হয় নাই – গিয়েছে যা হয়ে ,
মৃত্যুরেও ডাকো তুমি সেই ব্যথা আকাঙ্ক্ষার অস্থিরতা লয়ে !

২৫

মৃত্যুরে বন্ধুর মতো ডেকেছি তো ,- প্রিয়ার মতন !-
চকিত শিশুর মতো তার কোলে লুকায়েছি মুখ ;
রোগীর জ্বরের মতো পৃথিবীর পথের জীবন ;
অসুস্থ চোখের’পরে অনিদ্রার মতন অসুখ ;
তাই আমি প্রিয়তম ;- প্রিয়া ব’লে জড়ায়েছি বুক ,-
ছায়ার মতন আমি হয়েছি তোমার পাশে গিয়া !-
যে ধূপ নিভিয়া যায় তার ধোঁয়া আঁধারে মিশুক ,-
যে ধোঁয়া মিলায়ে যায় তারে তুমি বুকে তুলে নিয়া
ঘুমোনো গন্ধের মতো স্বপ্ন হয়ে তার ঠোঁটে চুমো দিও , প্রিয়া !

0 Shares