জীবন

২৬

মৃত্যুরে ডেকেছি আমি প্রিয়ের অনেক নাম ধ’রে ।
যে বালক কোনোদিন জানে নাই গহ্বরের ভয় ,
পুবের হাওয়ার মতো ভূত হয়ে মন তার ঘোরে !-
নদীর ধারে সে ভূত একদিন দেখেছে নিশ্চয় !
পায়ের তলের পাতা – পাপড়ির মতো মনে হয়
জীবনেরে ,- খ’সে ক্ষয়ে গিয়েছে যে, তাহার মতন
জীবন পড়িয়া থাকে ,- তার বিছানায় খেদ ,- ক্ষয় –
পাহাড় নদীর পারে হাওয়া হয়ে ভূত হয়ে মন
চকিত পাতার শব্দে বাতাসের বুকে তারে করে অন্বেষণ !

২৭

জীবন ,- আমার চোখে মুখ তুমি দেখেছ তোমার ,-
একটি পাতার মতো অন্ধকারে পাতা- ঝরা গাছে ;-
একটি বোঁটার মতো যে-ফুল ঝরিয়া গেছে তার;
একাকী তারার মতো , সব তারা আকাশের কাছে
যখন মুছিয়া গেছে ,- পৃথিবীতে আলো আসিয়াছে ;-
যে ভালোবেসেছে , তার হৃদয়ের ব্যথার মতন ;-
কাল যাহা থাকিবে না,- আজই যাহা স্মৃতি হয়ে আছে ;-
দিন-রাত্রি – আমাদের পৃথিবীর জিইবন তেমন !
সন্ধ্যার মেঘের মতো মুহূর্তের রং লয়ে মুহূর্তে নূতন !

২৮

আশঙ্কা ইচ্ছার পিছে বিদ্যুতের মতো কেঁপে ওঠে !
বীণার তারের মতো কেঁপে কেঁপে ছিঁড়ে যায় প্রাণ !
অসংখ্য পাতার মতো লুটে তারা পথে পথে ছোটে ,-
যখন ঝড়ের মতো জীবনের এসেছে আহ্বান !
অধীর ঢেউয়ের মতো – অশান্ত হাওয়ার মতো গান
কোন দিকে ভেসে যায় !- উড়ে যায়,- কয় কোন কথা !-
ভোরের আলোয় আজ শিশিরের বুকে যেই ঘ্রাণ ,
রহিবে না কাল তার কোনো স্বাদ ,- কোনো নিশ্চয়তা !
পাণ্ডুর পাতার রং গালে,- তবু রক্তে তার রবে অসুস্থতা !

২৯

যেখানে আসেনি চাষা কোনোদিন কাস্তে হাতে লয়ে,
জীবনের বীজ কেউ বোনে নাই যেইখানে এসে ,
নিরাশার মতো ফেঁপে চোখ বুজে পলাতক হয়ে
প্রেমের মৃত্যুর চোখে সেইখানে দেখিয়াছি শেষ !
তোমার চোখের’পরে তাহার মুখেরে ভালোবেসে
এখানে এসেছি আমি ,- আর একবার কেঁপে উঠে
অনেক ইচ্ছার বেগে ,- শান্তির মতন অবশেষে
সব ঢেউ ভেঙে নিয়ে ফেনার ফুলের মতো ফুটে ,
ঘুমাব বালির’পরে ;- জীবনের দিকে আর যাব নাকো ছুটে !

৩০

নির্জন রাত্রির মতো শিশিরের গুহার ভিতরে ,-
পৃথিবীর ভিতরের গহ্বরের মতন নিঃসাড়
রবো আমি ;- অনেক গতির পর- আকাঙ্ক্ষার পরে
যেমন থামিতে হয় – বুজে যেতে হয় একবার :-
পৃথিবীর পারে থেকে কবরের মৃত্যুর ওপার
যেমন নিস্তব্ধ শান্ত নিমীলিত শূন্য মনে হয় ;-
তেমন আস্বাদ এক কিংবা সেই স্বাদহীনতার
সাথে একবার হবে মুখোমুখি সব পরিচয় !
শীতের নদীর বুকে মৃত জোনাকির মুখ তবু সব নয় !

৩১

আবার পিপাসা সব ভূত হয়ে পৃথিবীর মাঠে ,-
অথবা গৃহের’পরে –ছায়া হয়ে , ভূত হয়ে ভাসে !-
যেমন শীতের রাতে দেখা যায় জ্যোৎস্না ধোঁয়াটে ,
ফ্যাকাশে পাতার’পরে দাঁড়ায়েছে উঠানের ঘাসে ;-
যেমন হঠাৎ দুটো কালো পাখা চাঁদের আকাশে
অনেক গভীর রাতে চমকের মতো মনে হয় ;
কার পাখা?- কোন পাখি ? পাখি সে কি ! অথচ সে আসে !-
তখন অনেক রাতে কবরের মুখ কথা খয় !-
ঘুমন্ত তখন ঘুমে, জাগিতে হতেছে যার , সে জাগিয়া রয় !

৩২

বনের পাতার মতো কুয়াশার হলুদ না হতে ,
হেমন্ত আসার আগে হিম হয়ে প’ড়ে গেছি ঝ’রে !-
তোমার বুকের’পরে মুখ আমি চেয়েছি লুকোতে ;
তোমার দুইটি চোখ প্রিয়ার মতো ক’রে
দেখিতে চেয়েছি , মৃত্যু – পথ থেকে ঢের দূরে স’রে
প্রেমের মতন হয়ে !- তুমি হবে শান্তির মতন!-
তারপর স’রে যাব,- তারপর তুমি যাবে মরে,-
অধীর বাতাস লয়ে কাঁপুক না পৃথিবীর বন !-
মৃত্যুর মতন তবু বুজে যাক,- ঘুমাক মৃত্যুর মতো মন !

৩৩

নির্জন পাতার মতো ,- আলেয়ার বাষ্পের মতন ,
ক্ষীণ বিদ্যুতের মতো ছেঁড়া-মেঘ আকাশের ধারে ,
আলোর মাছির মতো- রুগ্নের স্বপ্নের মতো মন
একবার ছিল ঐ পৃথিবীর সমুদ্রে পাহাড়ে ,-
ঢেউ ভেঙে ঝ’রে যায় ,- ম’রে যায় ,- কে ফেরাতে পারে !
তবুও ইশারা করে ফাল্গুন- রাতের গন্ধে বয়ে
মৃত্যুরেও তার সেই কবরের গহ্বরে আঁধারে
জীবন ডাকিতে আসে ;- হয় নাই – গিয়েছে যা হয়ে ,
মৃত্যুরেও ডাকো তুমি সেই স্মৃতি আকাঙ্ক্ষার অস্থিরতা লয়ে !

৩৪

পৃথিবীর অন্ধকার অধীর বাতাসে গেছে ভ’রে-
শস্য ফ’লে গেছে মাঠে ,- কেটে নিয়ে চলে গেছে চাষা ;
নদীর পারের বন মানুষের মতো শব্দ ক’রে
নির্জন ঢেউয়ের কানে মানুষের মনের পিপাসা ,-
মৃত্যুর মতন তার জীবনের বেদনার ভাষা ,-
আবার জানায়ে যায় !- কবরের ভূতের মতন
পৃথিবীর বুকে রোজ লেগে থাকে যে আশা হতাশা ,-

0 Shares