পরস্পর

সবাই থামিলে পরে মনে হল – একদিন আমি যাবো চ’লে
কল্পনার গল্প সব ব’লে
তারপর ,- শীত-হেমন্তের শেষে বসন্তের দিন
আবার তো এসে যাবে ;
এক কবি ,- তন্ময় , শৌখিন ,-
আবার তো জন্ম নেবে তোমাদের দেশে !
আমরা সাধিয়া গেছি যার কথা ,- পরীর মতন এক ঘুমোনো মেয়ে সে
হীরের ছুরির মতো গায়ে
আরো ধার লবে সে শানায়ে !
সেই দিনও তার কাছে হয়তো রবে না আর কেউ ,-
মেঘের মতন চুল ; তার সে চুলের ঢেউ
এমনি পড়িয়া রবে পালঙ্কের’পর ,-
ধূপের ধোঁয়ার মতো ধলা সেই পুরীর ভিতর !
চারপাশে তার
রাজ – যুবরাজ – জেতা – যোদ্ধাদের হাড়
গড়েছে পাহাড় !
এ রূপকথার এই রূপসীর ছবি
তুমিও দেখিবে এসে ,-
তুমিও দেখিবে এসে কবি !
পাথরের হাতে তার রাখিবে তো হাত ,-
শরীরে ননীর ছিরি ,- ছুঁয়ে দেখো – চোখা ছুরি ,- ধারালো হাতির দাঁত !
হাড়েরই কাঠামো শুধু ,- তার মাঝে কোনোদিন হৃদয় মমতা
ছিল কই ! – তবু , সে কি জেগে যাবে ? কবে সে কি কথা
তোমার রক্তের তাপ পেয়ে ?-
আমার কথার এই মেয়ে ,-এই মেয়ে !
কে যেন উঠিল ব’লে,- তোমরা তো বলো রূপকথা,-
তেপান্তরের গল্প সব ,- ওর কিছু আছে নিশ্চয়তা !
হয়তো অমনি হবে,- দেখিনিকো তাহা ;
কিন্তু , শোনো –স্বপ্ন নয় , আমাদেরি দেশে কবে আহা !-
যেখানে মায়াবী নাই ,- জাদু নাই কোনো ,-
এ দেশের- গাল নয়, গল্প নয় , দু’একটা শাদা কথা শোনো !
সে-ও এক রোদে লাল দিন ,
রোদে লাল -, সবজীর গানে গানে সবুজ স্বাধীন
একদিন,- সেই একদিন !
ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল চোখে ,
ছেঁড়া করবীর মত মেঘের আলোকে
চেয়ে দেখি রূপসী কে প’ড়ে আছে খাটের উপরে !
মায়াবীর ঘরে
ঘুমন্ত কন্যার কথা শুনেছি অনেক আমি , দেখিলাম তবু চেয়ে চেয়ে
এ ঘুমোনো মেয়ে
পৃথিবীর ,- মানুষের দেশের মতন;
রূপ ঝ’রে যায় ,- তবু করে যারা সৌন্দর্যের মিছা আয়োজন ,-
যে যৌবন ছিঁড়েফেরে যায়,
যারা ভয় পায়
আয়নায় তার ছবি দেখে !-
শরীরের ঘুণ রাখে ঢেকে ,
ব্যর্থতা লুকায়ে রাখে বুকে,
দিন যাহাদের অসাধে ,- অসুখে !-
দেখিতেছিলাম সেই সুন্দরীর মুখ ,
চোখে ঠোঁটে অসুবিধা ,- ভিতরে অসুখ !
কে যেন নিতেছে তারে খেয়ে !-
এ ঘুমোনো মেয়ে
পৃথিবীর ,- ফোঁপরার মতো ক’রে এরে লয় শুষে
দেবতা গন্ধর্ব নাগ পশু ও মানুষে !…
সবাই উঠিল ব’লে ,- ঠিক –ঠিক –ঠিক !
আবার বলিল সেই সৌন্দর্য- তান্ত্রিক,-
আমায় বলেছে সে কি শোনো ,-
আর এক জন এই ,-
পরী নয় ,- মানুষ ও সে হয়নি এখনো ,-
বলেছে সে – কাল সাঁঝরাতে
আবার তোমার সাথে
দেখা হবে ? – আসিবে তো ?- তুমি আসিবে তো !
দেখা যদি পেত !
নিকটে বসায়ে
কালো খোঁপা ফেলিত খসায়ে ,-
কি কথা বলিতে গিয়ে থেমে যেত শেষে
ফিক ক’রে হেসে !
তবু , আরো কথা
বলিতে আসিত ,- তবু, সব প্রগলভতা
থেমে যেত !
খোঁপা বেঁধে ,- ফের খোঁপা ফেলিত খসায়ে,-
স’রে যেত , দেয়ালের গায়ে
রহিত দাঁড়ায়ে !
রাত ঢের , – বাড়িবে আরো কি
এই রাত!- বেড়ে যায় , তবু চোখাচোখি
হয় নাই দেখা
আমাদের দুজনার !- দুইজন ,- একা !-
বার-বার চোখ তবু কেন ওর ভ’রে আসে জলে !
কেন বা এমন ক’রে বলে,
কাল সাঁঝরাতে
আবার তোমার সাথে
দেখা হবে !- আসিবে তো?- তুমি আসিবে তো !-
আমি না কাঁদিতে কাঁদে , দেখা যদি পেত !…
দেখা দিয়ে বলিলাম , ‘ কে গো তুমি ?’- বলিল সে , ‘ তোমার বকুল ,
মনে আছে ?’- ‘ এগুলি কি , বাসি চাঁপাফুল ?
হ্যাঁ , হ্যাঁ , মনে আছে ;’ – ‘ভালোবাসো ?’ –হাসি পেল, – হাসি !
‘ ফুলগুলো বাসি নয় ,- আমি শুধু বাসি !’
আঁচলের খুঁট দিয়ে চোখ মুছে ফেলে
নিবানো মাটির বাতি জ্বেলে
চ’লে এল কাছে ,-
জটার মতন খোঁপা অন্ধকারে খসিয়া গিয়াছে –
আজো এত চুল !
চেয়ে দেখি ,- দুটো হাত, ক’খানা আঙুল
একবার চুপে তুলে ধরি ;
চোখ দুটো চুন-চুন ,- মুখ খড়ি-খড়ি!
থুতনিতে হাত দিয়ে তবু চেয়ে দেখি ,-
সব বাসি ,সব বাসি , একেবারে মেকি !

0 Shares