দুর্গেশনন্দিনী

প্রথম খণ্ড
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : বীরপঞ্চমী

উভয়ে শৈলেশ্বর প্রণাম করিয়া, সশঙ্কচিত্তে গড় মান্দারণ অভিমুখে যাত্রা করিলেন। কিঞ্চিৎ নীরবে গেলেন। কিছু দূর গিয়া রাজকুমার প্রথমে কথা কহিলেন, “বিমলে, আমার এক বিষয়ে কৌতূহল আছে। তুমি শুনিয়া কি বলিবে বলিতে পারি না।”

বিমলা কহিলেন, “কি?”

জ। আমার মনে প্রতীতি জন্মিয়াছে, তুমি কদাপি পরিচারিকা নও।

বিমলা ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “এ সন্দেহ আপনার মনে কেন জন্মিল?”

জ। বীরেন্দ্রসিংহের কন্যা যে অম্বরপতির পুত্রবধূ হইতে পারেন না, তাহার বিশেষ কারণ আছে। সে অতি গুহ্য বৃত্তান্ত; তুমি পরিচারিকা হইলে সে গুহ্য কাহিনী কি প্রকারে জানিবে ? বিমলা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন। কিঞ্চিৎ কাতরস্বরে কহিলেন, “আপনি যথার্থ অনুভব করিয়াছেন; আমি পরিচারিকা নহি। অদৃষ্টক্রমে পরিচারিকার ন্যায় আছি। অদৃষ্টকেই বা কেন দোষি? আমার অদৃষ্ট মন্দ নহে!”

রাজকুমার বুঝিলেন যে, এই কথায় বিমলার মনোমধ্যে পরিতাপ উদয় হইয়াছে; অতএব তৎসম্বন্ধে আর কিছু বলিলেন না। বিমলা স্বতঃ কহিলেন, “যুবরাজ, আপনার নিকট পরিচয় দিব; কিন্তু এক্ষণে নয়। ও কি শব্দ? পশ্চাৎ কেহ আসিতেছে?”

এই সময়ে পশ্চাৎ পশ্চাৎ মনুষ্যের পদধ্বনি শ্রুত হইল। এমন বোধ হইল, যেন দুইজন মনুষ্য কাণে কাণে কথা কহিতেছে। তখন মন্দির হইতে প্রায় অর্ধ ক্রোশ অতিক্রম হইয়াছিল। রাজপুত্র কহিলেন, “আমার অত্যন্ত সন্দেহ হইতেছে, আমি দেখিয়া আসি।”

এই বলিয়া রাজপুত্র কিছু পথ প্রত্যাবর্তন করিয়া দেখিলেন এবং পথের পার্শ্বেও অনুসন্ধান করিলেন; কোথাও মনুষ্য দেখিতে পাইলেন না। প্রত্যাগমন করিয়া বিমলাকে কহিলেন, “আমার সন্দেহ হইতেছে, কেহ আমাদের পশ্চাদ্বর্তী হইয়াছে। সাবধানে কথা কহা ভাল।”

এখন উভয়ে অতি মৃদুস্বরে কথা কহিতে কহিতে চলিলেন। ক্রমে গড় মান্দারণ গ্রামে প্রবেশ করিয়া দুর্গসম্মুখে উপস্থিত হইলেন। রাজপুত্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি এক্ষণে দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিবে কি প্রকারে? এত রাত্রে অবশ্য ফটক বন্ধ হইয়া থাকিবে।”

বিমলা কহিলেন, “চিন্তা করিবেন না, আমি তাহার উপায় স্থির করিয়াই বাটী হইতে যাত্রা করিয়াছিলাম।”

রাজপুত্র হাস্য করিয়া কহিলেন, “লুকান পথ আছে?”

বিমলাও হাস্য করিয়া উত্তর করিলেন, “যেখানে চোর, সেইখানেই সিঁধ।”

ক্ষণকাল পরে পুনর্বার রাজপুত্র কহিলেন, “বিমলা, এক্ষণে আর আমার যাইবার প্রয়োজন নাই। আমি দুর্গপার্শ্বস্থ এই আম্রকানন মধ্যে তোমার অপেক্ষা করিব, তুমি আমার হইয়া অকপটে তোমার সখীকে মিনতি করিও; পক্ষ পরে হয়, মাস পরে হয়, আর একবার আমি তাঁহাকে দেখিয়া চক্ষু জুড়াইব।”

বিমলা কহিলেন, “এ আম্রকাননও নির্জন স্থান নহে; আপনি আমার সঙ্গে আসুন।”

জ। কত দূর যাইব?

বি। দুর্গমধ্যে চলুন।

রাজকুমার কিঞ্চিৎ ভাবিয়া কহিলেন, “বিমলা, এ উচিত হয় না। দুর্গ-স্বামীর অনুমতি ব্যতীত আমি দুর্গমধ্যে যাইব না।”

বিমলা কহিলেন, “চিন্তা কি?”

রাজকুমার গর্বিত বচনে কহিলেন, “রাজপুত্রেরা কোন স্থানে যাইতে চিন্তা করে না। কিন্তু বিবেচনা করিয়া দেখ, অম্বরপতির পুত্রের কি উচিত যে, দুর্গ-স্বামীর অজ্ঞাতে চোরের ন্যায় দুর্গপ্রবেশ করে?”

বিমলা কহিলেন, “আমি আপনাকে ডাকিয়া লইয়া যাইতেছি।”

রাজকুমার কহিলেন, “মনে করিও না যে, আমি তোমাকে পরিচারিকা জ্ঞানে অবজ্ঞা করিতেছি। কিন্তু বল দেখি, দুর্গমধ্যে আমাকে আহ্বান করিয়া লইয়া যাইবার তোমার কি অধিকার?”

বিমলাও ক্ষণেককাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, “আমার কি অধিকার, তাহা না শুনিলে আপনি যাইবেন না?”

উত্তর – “কদাপি যাইব না।”

বিমলা তখন রাজপুত্রের কর্ণে লোল হইয়া একটি কথা বলিলেন।

রাজপুত্র কহিলেন, “চলুন।”

বিমলা কহিলেন, “যুবরাজ, আমি দাসী, দাসীকে ‘চল’ বলিবেন।”

যুবরাজ বলিলেন, “তাই হউক।”

যে রাজপথ অতিবাহিত করিয়া বিমলা যুবরাজকে লইয়া যাইতেছিলেন, সে পথে দুর্গদ্বারে যাইতে হয়। দুর্গের পার্শ্বে আম্রকানন; সিংহদ্বার হইতে কানন অদৃশ্য। ঐ পথ হইতে যথা আমোদর অন্তঃপুরপশ্চাৎ প্রবাহিত আছে, সে দিকে যাইতে হইলে এই আম্রকানন মধ্য দিয়া যাইতে হয়। বিমলা এক্ষণে রাজবর্ত্ম ত্যাগ করিয়া রাজপুত্রসঙ্গে এই আম্রকাননে প্রবেশ করিলেন।

আম্রকানন প্রবেশাবধি, উভয়ে পুনর্বার সেইরূপ শুষ্কপর্ণভঙ্গ সহিত মনুষ্য-পদ-ধ্বনির ন্যায় শব্দ শুনিতে পাইলেন।

বিমলা কহিলেন, “আবার!”

রাজপু্ত্র কহিলেন, “তুমি পুনরপি ক্ষণেক দাঁড়াও, আমি দেখিয়া আসি।”

রাজপুত্র অসি নিষ্কোষিত করিয়া যে দিকে শব্দ হইতেছিল, সেই দিকে গেলেন; কিন্তু কিছু দেখিতে পাইলেন না। আম্রকাননতলে নানা প্রকার আরণ্য লতাদির সমৃদ্ধিতে এমন বন হইয়াছিল এবং বৃক্ষাদির ছায়াতে রাত্রে কাননমধ্যে এমন অন্ধকার হইয়াছিল যে, রাজপুত্র যেখানে যান, তাহার অগ্রে অধিক দূর দেখিতে পান না। রাজপুত্র এমনও বিবেচনা করিলেন যে, পশুর পদচারণে শুষ্কপত্রভঙ্গশব্দ শুনিয়া থাকিবেন। যাহাই হউক, সন্দেহ নিঃশেষ করা উচিত বিবেচনা করিয়া, রাজকুমার অসিহস্তে আম্রবৃক্ষের উপর উঠিলেন। বৃক্ষের অগ্রভাগে আরোহণ করিয়া ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন; বহুক্ষণ নিরীক্ষণ করিতে করিতে, দেখিতে পাইলেন যে, এক বৃহৎ আম্রবৃক্ষের তিমিরাবৃত শাখাসমষ্টিমধ্যে দুইজন মনুষ্য বসিয়া আছে; তাহাদিগের উষ্ণীষে চন্দ্ররশ্মি পড়িয়াছে, কেবল তাহাই দেখা যাইতেছিল; অবয়ব ছায়ায় লুক্কায়িত ছিল। রাজপুত্র উত্তমরূপে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন, উষ্ণীষ মস্তকে মনুষ্য বটে, তাহার সন্দেহ নাই। তিনি উত্তমরূপে বৃক্ষটি লক্ষিত করিয়া রাখিলেন যে, পুনরায় আসিলে না ভ্রম হয়। পরে ধীরে ধীরে বৃক্ষ হইতে অবতরণ করিয়া নিঃশব্দে বিমলার নিকট আসিলেন। যাহা দেখিলেন, তাহা বিমলার নিকট বর্ণন করিয়া কহিলেন, “এ সময়ে যদি দুইটা বর্শা থাকিত!”

বিমলা কহিলেন, “বর্শা লইয়া কি করিবেন?”

জ। তাহা হইলে ইহারা কে, জানিতে পারিতাম; লক্ষণ ভাল বোধ হইতেছে না। উষ্ণীষ দেখিয়া বোধ হইতেছে, দুরাত্মা পাঠানেরা কোন মন্দ অভিপ্রায়ে আমাদের সঙ্গ লইয়াছে।

তৎক্ষণাৎ বিমলার পথপার্শ্বস্থ মৃত অশ্ব, উষ্ণীষ আর অশ্বসৈন্যের পদচিহ্ন স্মরণ হইল। তিনি কহিলেন, “আপনি তবে এখানে অপেক্ষা করুন; আমি পলকমধ্যে দুর্গ হইতে বর্শা আনিতেছি।”

এই বলিয়া বিমলা ঝটিতি দুর্গমূলে গেলেন। যে কক্ষে বসিয়া সেই রাত্রি প্রদোষে বেশবিন্যাস করিয়াছিলেন, তাহার নীচের কক্ষের একটি গবাক্ষ আম্রকাননের দিকে ছিল। বিমলা অঞ্চল হইতে একটি চাবি বাহির করিয়া ঐ কলে ফিরাইলেন; পশ্চাৎ জানালার গরাদে ধরিয়া দেয়ালের দিকে টান দিলেন; শিল্পকৌশলের গুণে কবাট, চৌকাট, গরাদ সকল সমেত দেয়ালের মধ্যে এক রন্ধ্রে প্রবেশ করিল, বিমলার কক্ষমধ্যে প্রবেশ জন্য পথ মুক্ত হইল। বিমলা কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া দেয়ালের মধ্য হইতে জানালার চৌকাঠ ধরিয়া টানিলেন, জানালা বাহির হইয়া পুনর্বার পূর্বস্থানে স্থিত হইল; কবাটের ভিতর দিকে পূর্ববৎ গা-চাবির কল ছিল, বিমলা অঞ্চলের চাবি লইয়া ঐ কলে লাগাইলেন। জানালা নিজ স্থানে দৃঢ়রূপে সংস্থাপিত হইল, বাহির হইতে উদ্ঘাটিত হইবার সম্ভাবনা রহিল না।

বিমলা অতি দ্রুতবেগে দুর্গের শেলেখানায় গেলেন। শেলেখানায় প্রহরীকে কহিলেন “আমি তোমার নিকট যাহা চাহি, তুমি কাহারও সাক্ষাৎ বলিও না। আমাকে দুইটা বর্শা দাও – আবার আনিয়া দিব।”

প্রহরী চমৎকৃত হইল। কহিল, “মা, তুমি বর্শা লইয়া কি করিবে?”

প্রত্যুৎপন্নমতি বিমলা কহিলেন, “আজ আমার বীরপঞ্চমীর ব্রত, ব্রত করিলে বীর পুত্র হয়; তাহাতে রাত্রে অস্ত্র পূজা করিতে হয়; আমি পুত্র কামনা করি, কাহারও সাক্ষাৎ প্রকাশ করিও না।”

প্রহরীকে যেরূপ বুঝাইল, সেও সেইরূপ বুঝিল। দুর্গস্থ সকল ভৃত্য বিমলার আজ্ঞাকারী ছিল; সুতরাং দ্বিতীয় কথা না কহিয়া দুইটা শাণিত বর্শা দিল।

বিমলা বর্শা লইয়া পূর্ববেগে গবাক্ষের নিকট প্রত্যাগমন করিয়া পূর্ববৎ ভিতর হইতে জানালা খুলিলেন, এবং বর্শা সহিত নির্গত হইয়া জগৎসিংহের নিকট গেলেন।

ব্যস্ততা প্রযুক্তই হউক, বা নিকটেই থাকিবেন এবং তৎক্ষণেই প্রত্যাগমন করিবেন, এই বিশ্বাসজনিত নিশ্চিন্তভাব প্রযুক্তই হউক, বিমলা বহির্গমনকালে জালরন্ধ্রপথ পূর্ববৎ অবরুদ্ধ করিয়া যান নাই। ইহাতে প্রমাদ ঘটনার এক কারণ উপস্থিত হইল। জানালার অতি নিকটে এক আম্রবৃক্ষ ছিল, তাহার অন্তরালে এক শস্ত্রধারী পুরুষ দণ্ডায়মান ছিল; সে বিমলার এই ভ্রম দেখিতে পাইল। বিমলা যতক্ষণ না দৃষ্টপথ অতিক্রম করিলেন, ততক্ষণ শস্ত্রপাণি পুরুষ বৃক্ষের অন্তরালে রহিল; বিমলা দৃষ্টির অগোচর হইলেই সে ব্যক্তি বৃক্ষমূলে শব্দশীল চর্মপাদুকা ত্যাগ করিয়া শনৈঃ শনৈঃ পাদবিক্ষেপে গবাক্ষসন্নিধানে আসিল। প্রথমে গবাক্ষের মুক্তপথে কক্ষমধ্যে দৃষ্টিপাত করিল, কক্ষমধ্যে কেহ নাই দেখিয়া, নিঃশব্দে প্রবেশ করিল। পরে সেই কক্ষের দ্বার দিয়া অন্তঃপুরমধ্যে প্রবেশ করিল।

এদিকে রাজপুত্র বিমলার নিকট বর্শা পাইয়া পূর্ববৎ বৃক্ষারোহণ করিলেন এবং পূর্বলক্ষিত বৃক্ষে দৃষ্টিপাত করিলেন, দেখিলেন যে, এক্ষণে একটিমাত্র উষ্ণীষ দেখা যাইতেছে, দ্বিতীয় ব্যক্তি তথায় নাই; রাজপুত্র একটি বর্শা বাম করে রাখিয়া, দ্বিতীয় বর্শা দক্ষিণ করে গ্রহণপূর্বক, বৃক্ষস্থ উষ্ণীষ লক্ষ্য করিলেন। পরে বিশাল বাহুবল সহযোগে বর্শা নিক্ষেপ করিলেন। তৎক্ষণাৎ প্রথমে বৃক্ষপল্লবের প্রবল মর্মর শব্দ, তৎপরেই ভূতলে গুরু পদার্থের পতন শব্দ হইল; উষ্ণীষ আর বৃক্ষে নাই। রাজপুত্র বুঝিলেন যে, তাঁহার অব্যর্থ সন্ধানে উষ্ণীষধারী বৃক্ষশাখাচ্যুত হইয়া ভূতলে পড়িয়াছে।

জগৎসিংহ দ্রুতগতি বৃক্ষ হইতে অবতরণ করিয়া, যথা আহত ব্যক্তি পতিত হইয়াছে, তথা গেলেন; দেখিলেন যে, একজন সৈনিক-বেশধারী সশস্ত্র মুসলমান মৃতবৎ পতিত হইয়া রহিয়াছে। বর্শা তাহার চক্ষুর পার্শ্বে বিদ্ধ হইয়াছে।

রাজপুত্র মৃতবৎ দেহ নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন যে, একেবারে প্রাণবিয়োগ হইয়াছে। বর্শা চক্ষুর পার্শ্বে বিদ্ধ হইয়া তাহার মস্তিষ্ক ভেদ করিয়াছে। মৃত ব্যক্তির কবচমধ্যে একখানি পত্র ছিল; তাহার অল্পভাগ বাহির হইয়াছিল। জগৎসিংহ ঐ পত্র লইয়া জ্যোৎস্নায় আনিয়া পাঠ করিলেন। তাহাতে এইরূপ লেখা ছিল–

“কতলু খাঁর আজ্ঞানুবর্তিগণ এই লিপি দৃষ্টি মাত্র লিপিকাবাহকের আজ্ঞা প্রতিপালন করিবে।

কতলু খাঁ।”

বিমলা কেবল শব্দ শুনিতেছিলেন মাত্র, সবিশেষ কিছুই জানিতে পারেন নাই। রাজকুমার তাঁহার নিকটে আসিয়া সবিশেষ বিবৃত করিলেন। বিমলা শুনিয়া কহিলেন, “যুবরাজ! আমি এত জানিলে কখন আপনাকে বর্শা দিতাম না। আমি মহাপাতকিনী; আজ যে কর্ম করিলাম, বহুকালেও ইহার প্রায়শ্চিত্ত হইবে না।”

যুবরাজ কহিলেন, “শত্রুবধে ক্ষোভ কি? শত্রুবধ ধর্মে আছে।”

বিমলা কহিলেন, “যোদ্ধায় এমত বিবেচনা করুক। আমরা স্ত্রীজাতি।”

ক্ষণকাল পরে বিমলা কহিলেন, “রাজকুমার, আর বিলম্বে অনিষ্ট আছে। দুর্গে চলুন, আমি দ্বার খুলিয়া রাখিয়া আসিয়াছি।”

উভয়ে দ্রুতগতি দুর্গমূলে আসিয়া প্রথমে বিমলা, পশ্চাৎ রাজপুত্র প্রবেশ করিলেন। প্রবেশকালে রাজপুত্রের হৃৎকম্প ও পদকম্প হইল। শত সহস্র সেনার সমীপে যাঁহার মস্তকের একটি কেশও স্থানভ্রষ্ট হয় নাই, তাঁহার এ সুখের আলয়ে প্রবেশ করিতে হৃৎকম্প কেন?

বিমলা পূর্ববৎ গবাক্ষদ্বার রুদ্ধ করিলেন; পরে রাজপুত্রকে নিজ শয়নাগারে লইয়া গিয়া কহিলেন, “আমি আসিতেছি, আপনাকে ক্ষণেক এই পালঙ্কের উপর বসিতে হইবেকক। যদি অন্য চিন্তা না থাকে, তবে ভাবিয়া দেখুন যে, ভগবানের আসন বটপত্র মাত্র।”

বিমলা প্রস্থান করিয়া ক্ষণপরেই নিকটস্থ কক্ষের দ্বার উদ্ঘাটন করিলেন, “যুবরাজ! এই দিকে আসিয়া একটা নিবেদন শুনুন।”

যুবরাজের হৃদয় আবার কাঁপে, তিনি পালঙ্ক হইতে উঠিয়া কক্ষান্তরমধ্যে বিমলার নিকট গেলেন।

বিমলা তৎক্ষণাৎ বিদ্যুতের ন্যায় তথা হইতে সরিয়া গেলেন; যুবরাজ দেখিলেন, সুবাসিত কক্ষ; রজতপ্রদীপ জ্বলিতেছে; কক্ষপ্রান্তে অবগুণ্ঠনবতী রমণী,-সে তিলোত্তমা!

0 Shares