প্রজাপতির নির্বন্ধ

চন্দ্র। বড়ো আনন্দের কথা।

পূর্ণ। শ্রীশবাবু, বড়ো খুশি হলুম! বিপিনবাবু, আপনাদের বড়ো সৌভাগ্য! আশা করি অবলাকান্তবাবুও বঞ্চিত হন নি, তাঁরও একটি–

নির্মলার প্রবেশ

চন্দ্র। নির্মলা, শুনে খুশি হবে, শ্রীশবাবু এবং বিপিনবাবুর সঙ্গে এঁদের বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হয়ে গেছে। তা হলে কুমারব্রত উঠিয়ে দেওয়া সম্বন্ধে প্রস্তাব উত্থাপন করাই বাহুল্য।

নির্মলা। কিন্তু অবলাকান্তবাবুর মত তো নেওয়া হয় নি–তাঁকে এখানে দেখছি নে–

চন্দ্র। ঠিক কথা, আমি সেটা ভুলেই গিয়েছিলুম, তিনি আজ এখনো এলেন না কেন?

রসিক। কিছু চিন্তা করবেন না, তাঁর পরিবর্তন দেখলে আপনারা আরো আশ্চর্য হবেন।

অক্ষয়। চন্দ্রবাবু, এবারে আমাকেও দলে নেবেন। সভাটি যেরকম লোভনীয় হয়ে উঠল, এখন আমাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না।

চন্দ্র। আপনাকে পাওয়া আমাদের সৌভাগ্য।

অক্ষয়। আমার সঙ্গে সঙ্গে আর-একটি সভ্যও পাবেন। আজকের সভায় তাঁকে কিছুতেই উপস্থিত করতে পারলেম না। এখন তিনি নিজেকে সুলভ করবেন না– বাসরঘরে ভূতপূর্ব কুমারসভাটিকে সাধ্যমত পিণ্ডদান করে তার পরে যদি দেখা দেন। এইবার অবশিষ্ট সভ্যটি এলেই আমাদের চিরকুমার-সভা সম্পূর্ণ সমাপ্ত হয়!

শৈলের প্রবেশ

শৈল। (চন্দ্রকে প্রণাম করিয়া) আমাকে ক্ষমা করবেন।

শ্রীশ। এ কী, অবলাকান্তবাবু–

অক্ষয়। আপনারা মত পরিবর্তন করেছেন, ইনি বেশ পরিবর্তন করেছেন মাত্র।

রসিক। শৈলজা ভবানী এতদিন কিরাতবেশ ধারণ করেছিলেন, আজ ইনি আবার তপস্বিনীবেশ গ্রহণ করলেন।

চন্দ্র। নির্মলা, আমি কিছু বুঝতে পারছি নে।

নির্মলা। অন্যায়! ভারি অন্যায়! অবলাকান্তবাবু–

অক্ষয়। নির্মলা দেবী ঠিক বলেছেন– অন্যায়! কিন্তু সে বিধাতার অন্যায়। এঁর অবলাকান্ত হওয়াই উচিত ছিল, কিন্তু ভগবান এঁকে বিধবা শৈলবালা করে কী মঙ্গল সাধন করছেন সে রহস্য আমাদের অগোচর।

শৈল। (নির্মলার প্রতি) আমি অন্যায় করেছি, সে অন্যায়ের প্রতিকার আমার দ্বারা কি হবে? আশা করি কালে সমস্ত সংশোধন হয়ে যাবে।

পূর্ণ। (নির্মলার নিকটে আসিয়া) এই অবকাশে আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, চন্দ্রবাবুর পত্রে আমি যে স্পর্ধা প্রকাশ করেছিলুম সে আমার পক্ষে অন্যায় হয়েছিল– আমার মতো অযোগ্য–

চন্দ্র। কিছু অন্যায় হয় নি পূর্ণবাবু, আপনার যোগ্যতা যদি নির্মলা না বুঝতে পারেন তো সে নির্মলারই বিবেচনার অভাব।

[নির্মলার নতমুখে নিরুত্তরে অবস্থান

রসিক। (পূর্ণের প্রতি জনান্তিকে) ভয় নেই পূর্ণবাবু, আপনার দরখাস্ত মঞ্জুর, প্রজাপতির আদালতে ডিক্রি পেয়েছেন– কাল প্রত্যুষেই জারি করতে বেরোবেন।

শ্রীশ।(শৈলবালার প্রতি) বড়ো ফাঁকি দিয়েছেন।

বিপিন। সম্বন্ধের পূর্বেই পরিহাসটা করে নিয়েছেন।

শৈল।পরে তাই বলে নিষ্কৃতি পাবেন না।

বিপিন। নিষ্কৃতি চাই নে।

রসিক। এইবারে নাটক শেষ হল– এইখানে ভরতবাক্য উচ্চারণ করে দেওয়া যাক।–

সর্বস্তরতু দুর্গাণি সর্বো ভদ্রাণি পশ্যতু।

সর্বঃ কামানবাপ্নোতু সর্বঃ সর্বত্র নন্দতু॥

0 Shares