খুঁজি খুঁজি নারি

ডাক্তার সেন একবার উইলটা মনে মনে পড়িলেন‌, তাঁহার মুখে স্মরণাত্মক হাসি ফুটিয়া উঠিল। তারপর তিনি গলা পরিষ্কার করিয়া মন্দ্বকণ্ঠে পড়িতে আরম্ভ করিলেন–

নমো ভগবতে বাসুদেবায়। আমি শ্রীরামেশ্বর রায়‌, সাকিম‌, ১৭ নং শ্যামধন মিত্রের লেন‌, বাগবাজার‌, কলিকাতা‌, অদ্য সুস্থ শরীরে এবং বাহাল তবিয়াতে আমার শেষ উইল লিখিতেছি। অবস্থা গতিকে উইলের সাক্ষী যোগাড় করা সম্ভব হইল না‌, তাই নিজ হস্তে আগাগোড়া উইল লিখিতেছি। আমার বুদ্ধিভ্রংশ বা মস্তিষ্ক বিকার হয় নাই‌, ডাক্তার অসীম সেন তাহার সাক্ষী। এখন আমার শেষ ইচ্ছা অর্থাৎ Last will and testament লিপিবদ্ধ করিতেছি।

কলিকাতায় আমার যে আটটি বাড়ি আছে এবং ব্যাঙ্কে যত টাকা আছে‌, তন্মধ্যে হ্যারিসন রোডের বাড়ি এবং নগদ পঁচাত্তর হাজার টাকা আমার কন্যা শ্ৰীমতী নলিনী পাইবে। আমার স্ত্রী শ্ৰীমতী কুমুদিনী যাবজ্জীবন আমার শ্যামপুকুরের বাড়ির উপস্বত্র ভোগ করবেন। তাঁহার মৃত্যুর পর ওই বাড়ি আমার কন্যা নলিনীকে আসিবে। আমার বাকী যাবতীয় সম্পত্তি‌, ছয়টি বাড়ি এবং ব্যাঙ্কের টাপা পাইবে আমার পুত্র শ্ৰীকুশেশ্বর রায়। স্বনামধন্য সত্যান্বেষী শ্ৰীব্যোমকেশ বক্সী ও বিখ্যাত ডাক্তার অসীম সেনকে আমার উইলের একজিকিউটর নিযুক্ত করিয়া যাইতেছি; তাঁহারা যথানির্দেশ ব্যবস্থা করিবেন এবং আমার এস্টেট হইতে প্রত্যেকে পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাইবেন।

তারিখ পয়লা বৈশাখ, ১৩৬০

স্বাক্ষর বকলম খাস
শ্রীরামেশ্বর রায়

উইল পড়া শেষ হইলে কেহ কিছুক্ষণ কথা কহিল না‌, তারপর আমরা সকলে একসঙ্গে হর্ষধ্বনি করিয়া উঠিলাম। নলিনী গলদশ্রু নেত্ৰে ছুটিয়া আসিয়া ব্যোমকেশের পদধূলি লইল। গদগদ স্বরে বলিল‌, ‘আপনি আমাদের নতুন জীবন দিলেন।’

ব্যোমকেশ করুণ হাসিয়া বলিল‌, তা তো দিলাম। কিন্তু এ উইল কোর্টে মঞ্জুর করানো যাবে কি?’

ইন্সপেক্টর হালদার আসিয়া সবেগে ব্যোমকেশের করমর্দন করিলেন‌, বলিলেন‌, ‘আপনি ভাববেন না। ওরা উইল contest করতে সাহস করবে না। যদি করে আমি সাক্ষী দেব।’

ডাক্তার অসীম সেন বলিলেন‌, ‘আমিও।’

0 Shares