দুষ্টচক্র

‘আজ ভোরবেল বিশু পাল আর একটা ইনজেকশন নিল। সাবধানের মার নেই। তারপর পুলিস-ডাক্তারকে নিয়ে আমরা গেলাম। পুলিস-ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলেন পক্ষাঘাতাই বটে।

‘আমার মনটা গোড়া থেকেই খুঁৎখুঁৎ করছিল। একটা সুদখোর মহাজন কেবল আমাকে তার দুঃখের কাহিনী শোনাবার জন্য একশো টাকা খরচ করবে? ওইখানেই বিশু পাল একটু ভুল করে ফেলেছিল। তারপর আজ সকালে যখন কাগজে অভয় ঘোষালের মৃত্যু-সংবাদ পড়লাম‌, তখন আর সন্দেহ রইল না যে বিশু পোলই অভয় ঘোষালের মৃত্যু ঘটিয়েছে। কিন্তু কী করে?

‘তিনজন লোক আছে : বিশু পাল নিজে‌, তার স্ত্রী এবং ডাক্তার রক্ষিত। ডাক্তার রক্ষিত খুবই প্যাঁচে পড়েছে‌, সে বিশু পালকে পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারে‌, কিন্তু নিজের হাতে খুন করবে: কি? বিশ্বাস হয় না। বিশু পালের স্ত্রী মেয়েমানুষ‌, স্বামীকে বাঁচাবার জন্যে সে অভয় ঘোষালকে হাতের কাছে পেলে বিষ খাওয়াতে পারে। কিন্তু অত দূরে গিয়ে ছুরি চালানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। ছুরি মেয়েমানুষের অস্ত্র নয়। বাকি রইল বিশু পাল। কিন্তু সে তো পক্ষাঘাতে পঙ্গু–

‘গুর্খা দুটোকে গোড়াতেই বাদ দিয়েছি। প্ৰাণীহত্যায় তাদের অরুচি নেই‌, তারা কুকরি চালাতেও জানে। কিন্তু বিশু পাল নিজের গু্ররখা দারোয়ানকে দিয়ে খুন করাবে এত কাঁচা ছেলে সে নয়। গুর্খাদের মাথায় প্যাঁচালো বুদ্ধি নেই‌, তারা সরল এবং গোঁয়ার। ধরা পড়লেই সত্যি কথা বলে ফেলবে।

‘তবে?’

‘হঠাৎ আসল কারসাজিটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। ডাক্তারি শাস্ত্ৰে জ্ঞান থাকলে অনেক আগেই বুঝতে পারতাম। বিশু পালের পক্ষাঘাত সত্যিকারের পক্ষাঘাত নয়‌, পক্ষাঘাতের অস্থায়ী বিকল্প‌, ডাক্তারি প্রক্রিয়ার দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।

‘ডাক্তার অসীম সেনকে ফোন করলাম। তিনি প্রবীণ ডাক্তার‌, এক কথায় বুঝিয়ে দিলেন।

‘আমার দুঃখ এই যে বিশু পালের সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার রক্ষিতও ছাড়া পেয়ে গেল। ডাক্তার হয়ে সে যে কাজ করেছে‌, তার ক্ষমা নেই। — যাহোক‌, প্রতিরক্ষা তহবিলে এক লক্ষ টাকাই বা মন্দ কি?’

(সমাপ্ত)

0 Shares