প্রশ্ন; আজ দ্বিতীয় অঙ্কে আপনার আর আপনার স্ত্রীর অভিনয় শেষ হয়ে গিয়েছিল, বাড়ি যাননি কেন?
উত্তর : দ্বিতীয় অঙ্কের পর বাড়ি যাব বলে বেরুচ্ছি, বিশু বলল, ‘একটু থেকে যাও, তোমার সঙ্গে কথা আছে। নাটক শেষ হলে বলব।’
প্রশ্ন : কি কথা?
উত্তর : তা জানি না, বিশু বলেনি।
প্রশ্ন : সেখানে অন্য কেউ উপস্থিত ছিল?
উত্তর : না, আমরা একলা ছিলাম। বিশুর ড্রেসিংরুমে কথা হয়েছিল।
ইন্সপেক্টর : হুঁ। আজ এই পর্যন্ত। আপনার স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিন।
নন্দিতা চক্রবর্তী। বয়স-৪৪। জীবিকা-নাট্যাভিনয়। ঠিকানা-বেহালা।
নোট : মহিষমৰ্দিনী চেহারা, দাশরথির চেয়ে মুঠিখানেক মাথায় উঁচু। লালচে চোখ, বড় বড় দাঁত, কিন্তু গলার স্বর মিষ্টি। আচরণ শিষ্ট ও শালীন।
প্রশ্ন : আপনার স্বামী নামকরা কমিক অ্যাকটর, আপনিও কি কমিক অ্যাকটিং করেন?
উত্তর : ও মা, অ্যাকটিং-এর আমি কি জানি। আগে আমি থিয়েটারের পোশাক আশাকের ইন-চার্জ ছিলুম। একদিন বিশুবাবু আমাকে একটা ছোট পার্ট নামিয়ে দিলেন। সেই থেকে (হেসে) আমার চেহারার মানানসই পার্ট থাকলে আমি করি।
প্রশ্ন : বিশুবাবু কেমন লোক ছিলেন?
উত্তর দিলাদরিয়া লোক ছিলেন। টাকা তাঁর হাতের ময়লা ছিল, যেমন রোজগার করতেন তেমনি খরচ করতেন। কিন্তু মদ খেতেন না, বদখেয়ালি ছিল না।
প্রশ্ন : প্রভুনারায়ণের বোনের সঙ্গে কিছু ছিল?
উত্তর : ওসব বাজে। গুজব, আমি বিশ্বাস করি না।
প্রশ্ন : সুলোচনা কেমন মানুষ?
উত্তর : (একটু থেমে) সুলোচনা ভাল অভিনয় করে, মেয়েও ভাল, কিন্তু মনের কথা কাউকে বলে না। ভারি চাপা প্রকৃতির মেয়ে।
প্রশ্ন; আর মালবিক?
উত্তর : মালবিকা ছেলেমানুষ, কিন্তু মনে ছুই-ছুৎ আছে। ভালভাবে কারুর সঙ্গে মেশে না, একটু দূরত্র রেখে চলে। তবে মেয়ে ভাল।
প্রশ্ন : আর ওর স্বামী?’
উত্তর : মণীশ? একটু গভীর প্রকৃতি, কিন্তু ভাল ছেলে। আর ওর কাজের তুলনা নেই, আলো ফেলে নাটকের চেহারা বদলে দিতে পারে। আগে সাঁতারু ছিল, কিন্তু সাঁতারে তো পয়সা নেই, তাই থিয়েটারে ঢুকেছে।
প্রশ্ন : আর ব্রজদুলালবাবু?
উত্তর : মদ-টদ খান বটে। কিন্তু ভারি বিজ্ঞ লোক। এক সময় মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন, এখনো গায়ে অসুরের শক্তি। ওঁর স্ত্রী শাস্তিও ভারি গুণের মেয়ে; নাচতে জানে, গাইতে জানে, গানে সুর দিতে জানে। এখানকার মিউজিক মাস্টার।
প্রশ্ন : স্বামী-স্ত্রীতে সদ্ভাব আছে?
উত্তর : তা আছে বই কি। তবে যে-যার নিজের কাজে থাকে, কেউ কারুর বড় একটা খবর রাখে না।
প্রশ্ন : আজ যখন আলো নেভানো হয় আপনি কোথায় ছিলেন?
উত্তর : আমার স্বামী আর আমি স্টেজের পিছন দিকে একটা বেঞ্চিতে বসেছিলুম।
ইন্সপেক্টর একজন জমাদারকে ডেকে বললেন, ইনি বেহালায় থাকেন। এঁকে আর এর স্বামীকে পুলিসের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দাও।’
কালীকিঙ্কর দাস। বয়স-৪০। জীবিকা-থিয়েটারের প্রমপটার। ঠিকানা’’ কৈলাস বোস লেন।
(অসমাপ্ত)