‘আসল কাজ শেষ হলে বিজয় বিশ্বাস সমস্ত টাকাকড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। নিষুতি শীতের রাত্রি, কেউ তাকে দেখল না। মানেক মেহতা শহরের বাইরে রাস্তার ধারে মোটর রেখে এসেছিল, সেই মোটরে চড়ে বিজয় বিশ্বাস উধাও হয়ে গেল।
‘হৈমবতী ঘাঁটি আগলে রইল। বুকের পটা আছে। ওই মেয়েমানুষটির। তারপর যা যা ঘটেছিল সবই প্রকাশ্য ব্যাপার। একমাত্র সাক্ষী হৈমবতী, সে যা বলল পুলিস তাই বিশ্বাস করল। বিশ্বাস না করার কোনও ছিল না, মানেক মেহতার চরিত্র পুলিস জানত।
‘কয়েকদিন পরে সহ্যাদ্রি হোটেল হোমজির হাতে তুলে দিয়ে শোকসন্তপ্তা বিধবা হৈমবতী মহাবলেশ্বর থেকে চলে গেল। ইতিমধ্যে বিজয় বিশ্বাস কলকাতার বাসায় এসে আড্ডা গেড়েছিল, হৈমবতীও এসে জুটল।
‘কিন্তু তারা ভারি হুঁশিয়ার লোক, একেবারে নিশ্চিন্ত হয়নি, সাবধানে ছিল; তাই মহাবলেশ্বরের চিঠি পেয়ে অজিত যখন দেখা করতে গেল। তখন হৈমবতী চমকে উঠল বটে। কিন্তু ঘাবড়ালো না। হৈমবতীর তখন বোধ হয় বিধবার সাজ ছিল না, সে বিধবা সাজতে গেল। চাকর অজিতকে বাইরের ঘরে বসাল। অজিত যদি এত সরল না হত, তাহলে ওর খটকা লাগত; শীতের সন্ধ্যাবেলা মেয়েরা গা ধুতে পারে, চুল ভিজিয়ে স্নান করে না।
‘যাহোক, হৈমবতী যখন এল তখন তার সদ্যস্নাত চেহারা দেখে অজিত মুগ্ধ হয়ে গেল। সে হৈমন্বতীকে আমার নাম বলল; হৈমবতীর ব্যাপার বুঝতে তিলার্ধ দেরি হল না। অজিত আমার নামটাকে যতখানি অখ্যাত মনে করে, ততখানি অখ্যাত নয়। আমার নাম, অজিতের কল্যাণেই নামটা সকলের জানা হয়ে গেছে। কিন্তু সে যাক। বিকাশ ওদিকে জানোলা দিয়ে শোবার ঘরে দুটো খাট আর লোহার সিন্দুক দেখে নিয়েছিল। অজিতের চিঠিতে ওটাই ছিল সবচেয়ে জরুরী কথা। চিঠি পড়ে কিছুই আর জানতে বাকি রইল না।
‘কিন্তু ওদের ধরা গেল না। সে রাত্রে অজিত পিছন ফিরবার সঙ্গে সঙ্গেই বোধ হয় হৈমবতী লোহার সিন্দুক থেকে টাকাকড়ি নিয়ে অদৃশ্য হয়েছিল। এখন তারা কোথায়, কোন ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে কে বলতে পারে। হয়তো তারা কোনও দিনই ধরা পড়বে না, হয়তো ধরা পড়বে। না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। পঁয়ত্ৰিশ কোটি নর-নারীর বাসভূমি এই ভারতবর্ষ—’
কিছুক্ষণ তিনজনে চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম। বাহিরে যে হাওয়া উঠিয়াছিল তাহা থামিয়া গিয়াছে। ঘড়িতে দশটা বাজিল।
রআমি বলিলাম, ‘সব সমস্যার তো সমাধান হল, কিন্তু একটা কথা বুঝলুম না। বিজয় বিশ্বাস ও বাড়িতে থাকতো না কেন? কোথায় থাকত? চাকরাটা ওদের সম্বন্ধে কি কিছুই সন্দেহ করেনি?’
ব্যোমকেশ গভীর নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, ‘হা ভগবান, তাও বোঝোনি? চাকরটাই বিজয় বিশ্বাস।’
(সমাপ্ত)